ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার ও বান্দরবান ফসলি জমিতে তামাকের আগ্রাসন শুরু

%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%95নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :::

কক্সবাজার ও বান্দরবানের সাতটি উপজেলার অন্তত ১২ হাজার একর ফসলি জমিতে শুরু হয়েছে তামাকের চাষ। পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, ফসলি জমিতে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে কৃষকদের সচেতন করা হলেও তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় উদ্যোগের কারণে চাষ বাড়ছে।
চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কক্সবাজারের মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর দুই তীরের পাঁচ হাজার একর জমিতে এখন তামাক চাষ হচ্ছে। নদীতীরের এসব জমিতে হতো শাকসবজির চাষ। এ ছাড়া বন বিভাগের কিছু জমিতেও তামাকের চাষ শুরু হয়েছে।
গত রোববার দুপুরে রামু উপজেলার গর্জনিয়ার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক হাজার একর ফসলি জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে রোপণ করা তামাক চারা পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা।
ইউনিয়নের বুমাংখিল গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, মাত্র কয়েক দিন হলো তামাক চারা রোপণ করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি–মার্চ মাসে তামাকপাতা কেটে চুল্লিতে পোড়ানো হবে। তত দিনে প্রয়োজনীয় কীটনাশক, সার ও প্রয়োজনীয় অর্থ তামাক কোম্পানিগুলো সরবরাহ দেবে।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও উখিয়ারঘোনা এলাকায় তামাক চাষ বেড়ে গেছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পাশাপাশি সরকারি খাস ও পতিত জমি, বাঁকখালী নদীর দুই তীর এবং সামাজিক বনায়নের জমিতেও তামাকের আবাদ হচ্ছে।
এদিকে বাঁকখালী নদীর ফতেখাঁরকূল, মেরংলোয়া, মুষকুম ও নাইক্ষ্যংছড়ি অংশ, চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বমু বনবিট, সুরাজপুর-মানিকপুর, মানিকপুর বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চল, মাতামুহুরী নদীর তীরের বমু বিলছড়ি, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন, কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও, ফুলছড়ি নদী, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং লামা ও আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তামাক চাষ পুরোদমে শুরু হয়েছে।
চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের তামাক চাষি নুরুল ইসলাম ও নুরুল আমিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, তামাক চাষ–অধ্যুষিত এলাকায় মালিকেরা ধান আবাদের জন্য সহজে জমি বর্গা দেন না। কারণ, এক কানি (৪০ শতক) ফসলি জমি এক বছরের জন্য লাগিয়ত দিয়ে ১০ হাজার টাকা পেলেও একই জমি তামাক চাষের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় ২৫ হাজার টাকায়।
পরিবেশকর্মীরা চকরিয়া নিউজকে জানান, গত বছর দুই জেলার সাতটি উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এবার আরও বেশি হতে পারে। ইতিমধ্যে ১২ হাজার একরে তামাকের চারা রোপণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে অবশিষ্ট জমিতে চারা রোপণ শেষ করা হবে।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান চকরিয়া নিউজকে  বলেন, তামাক চাষ ক্ষতিকর জেনেও কৃষকেরা টোব্যাকো কোম্পানির অতি উৎসাহী পদক্ষেপ ও অধিক লাভের আশায় চাষ অব্যাহত রেখেছেন। তামাক চাষের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে পড়তে হবে। কারণ বনাঞ্চল উজাড় করে কাঠ কেটে এনে পোড়ানো হয় তামাকচুল্লিতে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কৃষি বিভাগকে আরও কঠোরভাবে কাজ করতে হবে।
কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কেরামত আলী মল্লিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, বনকর্মীরা এখন সতর্ক। আগের মতো বনাঞ্চল উজাড় করে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বনজ সম্পদ রক্ষার স্বার্থে তামাক চাষ–অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এবার জোরালো অভিযান চালানো হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপসহকারী পরিচালক আশীষ কুমার চকরিয়া নিউজকে বলেন, তামাক চাষ বাদ দিয়ে সবজি ও ফসল উৎপাদনের জন্য চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও কাজ হচ্ছে না। তামাক চাষ দিন দিন বাড়ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, কক্সবাজার ও বান্দরবানের প্রায় ১২ হাজার একর জমিতে এখন তামাকের চাষ শুরু হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আরও ছয়-সাত হাজার একরে তামাক চাষ হবে। তিনি জানান, নদীর তীর বা বনভূমিতে তামাক চাষ হলে তা উচ্ছেদ করা হবে।

পাঠকের মতামত: